ভিডিও

বগুড়ায় নারী শিল্পপতি দেলওয়ারার মৃত্যু নিয়ে রহস্য ঘনীভূত

প্রকাশিত: মার্চ ০২, ২০২৪, ০৫:৪৮ বিকাল
আপডেট: মার্চ ০২, ২০২৪, ০৫:৪৮ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

স্টাফ রির্পোটার : বগুড়ার নারী শিল্পপতি দেলওয়ারা বেগমের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এমন রিপোর্ট নেওয়ার জন্য ফরেনসিক বিভাগে ধরনা দিচ্ছে অভিযুক্তরা এমন অভিযোগ তুলেছেন তার মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা খানম।

তিনি অভিযোগে বলেন, হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে যে কোনো মূল্যে তার ময়ের স্বাভাবিক মৃত্যুর সনদ চায় আসামিরা। এ জন্য তারা তৎপর হয়ে উঠেছে এবং বিভিন্ন স্থানে তদ্বিরে নেমেছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে অভিযুক্তরা যদি এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতই না থাকে তাহলে দেলওয়ারা বেগমের স্বাভাবিক মৃত্যুর সনদের জন্য কেন তাদের এই অপতৎপরতা।

উল্লেখ্য,মৃত্যুর ১০ মাস পর গত বুধবার কবর থেকে দেলওয়ারা বেগম (৭০) এর লাশ উত্তোলন করা হয়। গত বছরের ৩ মে রহস্যজনক মৃত্যু হয় তার । তিনি বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ার মৃত সেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী। দেলওয়ারা বেগমের রহস্যজনক মৃত্যুর পর আত্মীয়-স্বজন,তারমেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা খানম, ও পাড়া প্রতিবেশীদের লাশ না দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে দাফন করে। এতে জনমনে তার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।

পরে এ ঘটনায় দেলওয়ারা বেগমের মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা খানম বাদি হয়ে গত বছর ২০২৩ সালের ৮ জুলাই বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০ জনের নামে হত্যা মামলা করেন। মামলার আর্জিতে তিনি উল্লেখ করেন,সস্পত্তি আত্মসাৎ করতে দেলওয়ারা বেগমকে  মামলার ১ নম্বর আসামি নাদিরা সুলতানা তার বাসায় আটকে রাখে অপর মেয়ে ও জামাইদের সহযোগিতায়।

সেখানে গত ৩ মে দিবাগত রাতে দেলওয়ারা বেগমকে শ্বাসরোধ অথবা বিষক্রিয়ার মাধ্যমে হত্যার পর পরদিন গোপনে তড়িঘড়ি করে লাশ দাফন করা হয়েছে। মামলায় দেলওয়ারা বেগমের চার মেয়ে, জামাই ও নাতিকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য পিবিআই বগুড়াকে নির্দেশ দেন।

কিন্তু মামলা তদন্তের স্বার্থে লাশ উত্তোলনের প্রয়োজন হলে তা ঠেকাতে তৎপরতা শুরু করে আসামি পক্ষ ও তাদের সহযোগীরা। কিন্তু কয়েক মাস পরে আদালত লাশ উত্তোলনের অনুমতি দেন। আদালতের নির্দেশে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার দুপুরে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে শহরের নামাজগড় গোরস্থান থেকে দেলোয়ারা বেগমের লাশ উত্তোলন করা হয়। এরপর আলামত সংগ্রহ করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠানো হয়।

মামলার বাদি আকিলা সরিফা সুলতানা খানম আরও অভিযোগ করেন, বগুড়া শহরের কাটনারপাড়ায় এনায়েত আলী খান লেন এলাকায় ১ ও ২ নম্বর আসামীর বসতবাড়িতে গত বছরের ৩ মে বুধবার রাত আড়াইটার দিকে তাকে বাড়িতে আটকে রেখে হত্যা করা হয়।

তিনি বলেন, আসামিরা পরষ্পর যোগসাজসে দেলওয়ারা বেগমের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে ১নং আসামী ও তার স্ত্রী ২নং আসামী পরষ্পর অন্যান্য আসামিগণের সাথে যোগসাজস করে দেলওয়ারা বেগমকে জিম্মি করে ১ ও ২ আসামির বাড়িতে আটক করে রেখেছিল।

এমতাবস্থায় আসামিগণ পরষ্পর সম্মিলিতভাবে দেলওয়ারা বেগমের কাছ হতে তার জমি-জমা ও সম্পদ লিখে নিতে চাইলে তাতে অস্বীকার করেন এবং জানান যে, তার মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা খানমের সাথে সাক্ষাত করবেন। এতে আসামিগণ অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং ঘটনার দিন সকল আসামিগণ শ্বাসরোধ করে অথবা বিষক্রিয়া ঘটিয়ে দেলোওয়ারা বেগমকে হত্যা করে।

এরপর আসামিরা গোপনে ও কাউকে কিছু না জানিয়ে অতি দ্রুত অর্থাৎ গত ৪ মে বাদ যোহর দেলোওয়ারা বেগমের লাশ দাফন-কাফন সম্পন্ন করে। আকিলা সরিফা সুলতানা খানম লোকমুখে জেনে সকাল ৯ টার দিকে ঘটনাস্থলে সাক্ষীগণসহ মা দেলোওয়ারা বেগমকে দেখতে গেলে, আসামিরা আকিলা সরিফা সুলতানা খানম ও সাক্ষীগণকে লাশ দেখতে দেয় না।

উল্টো আকিলা সরিফা সুলতানা খানম ও সাক্ষীগণকে মৃত্যুর হুমকি প্রদর্শন করে। এতে সুষ্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, আসামিগণ দলবদ্ধভাবে দেলোওয়ারা বেগমের অর্থ সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করেছে। কাউকে তার দাফন-কাফন কাজে না ডেকে অতি গোপনে তার লাশ দাফন করেছে।

আকিলা সরিফা সুলতানা খানম আরো বলেন, আমার মায়ের সম্পদ লুন্ঠনকারীরা খুনের অভিযোগ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য নানা ধরনের অপকৌশল গ্রহণ করছে। তিনি বলেন, ফরেনসিক বিভাগে যারা তদবির করছে,তাদেরকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই অনেক সত্য তথ্য বেরিয়ে আসবে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই বগুড়ার এসআই জাকারিয়া জানান, তদন্তকালে দেলওয়ারা বেগমের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়না তদন্তের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল মাহমুদের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়।

পরে ময়না তদন্তের জন্য তার লাশ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। সেখানে ময়না তদন্ত শেষে তার লাশ ফের ওই কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর তা আদালতে দাখিল করা হবে।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS